Featured post

কৌশিকী অমাবস্যার মূল রহস্য

আজ কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা কারণ তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথি টি একটু বিশেষ কারণ অনেক কঠিন ও...

Contact us

Name

Email *

Message *

Total Pageviews

Ads

Share Our Page

Entertainment

Fun & Fashion

International

Latest Updates

Showing posts with label তথ্য. Show all posts
Showing posts with label তথ্য. Show all posts

কৌশিকী অমাবস্যার তাৎপর্য

13:15:00

তারাপীঠ: মার্কেণ্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধের জন্য 'দেবী দুর্গা' যখন ক্রোধান্বিত হন তখন তাঁর ভ্রূকুটি যুগল থেকে 'কৌশিকী দেবী' আবির্ভূতা হন এবং অসুর ভাতৃদ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। সেই থেকেই এই কৌশিকী দেবী 'কালী' তথা 'মহাকালী' রূপে পূজিতা হন। হিন্দু ধর্ম মতে এই অমাবস্যা তিথি নক্ষত্রেই কৌশিকী দেবী আবির্ভূতা হন। আর সেই কারণেই এই অমাবস্যা তিথি নক্ষত্রের নামকরণ হয় কৌশিকী অমাবস্যা।   

এবার জেনে নেওয়া যাক এই অমাবস্যার তাৎপর্য- 

চণ্ডী অনুযায়ী এই কৌশিকী অমাবস্যা বছরের আর বাকি অমাবস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি...। 
এই অমাবস্যায় গোটা ব্রহ্মাণ্ডে দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা 'তারা দেবী'কে 'মহাকালী' রূপে আহ্বান করা হয়। কথিত আছে, এই দিনেই নাকি সাধক শ্রেষ্ঠ বামাক্ষ্যাপা তাঁর 'বড় মা' অর্থাৎ 'তারা দেবী'র দর্শন পেয়ে সিদ্ধিলাভ করেন। বলা হয়, এই দিনে কোনও ভক্ত 'তারা দেবী'কে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করলে তার মনঃস্কামনা পূর্ণ হয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছরই আজকের দিনে বীরভূমের তারাপীঠ মন্দিরেও 'মহাকালী'র আহ্বান করা হয়।  

রহস্যময় প্রাচীন দেবভূমি কেদারনাথ মন্দিরের এই পাঁচটি অজানা তথ্য..এগুলি জানলে নাকি পুণ্য লাভ হবেই

10:30:00

কেদারনাথ মন্দিরটি হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩হাজার ৫৮৩মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই মন্দিরটি৷

 ভারতের উত্তরাখন্ডের গাড়োয়াল পর্বতে মন্দাকিনী নদীর তীরে অবস্থিত এই শিব মন্দিরটি৷ তবে, শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরটি বরফে ঢাকা পড়ে যাওয়ায় মূর্তিগুলিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়৷

কথিত আছে, আদি শঙ্কর বর্তমান স্থানে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন৷ একটি বিখ্যাত জ্যোতির্লিঙ্গের জন্যই এই মন্দিরটি বিখ্যাত৷ পাণ্ডবেরা এখানে তপস্যা করেই শিবকে তুষ্ট করার জন্য এখানে শিবের পূজা করেন৷ যদিও মহাভারত মহাকাব্যেও এই মন্দিরটির উল্লেখ রয়েছে৷ এটি উত্তর হিমালয়ের ছোট চারধাম তীর্থযাত্রার অন্যতম৷



 এই কেদারনাথ মন্দিরটিকে ঘিরেই রয়েছে বেশ কিছু তথ্য যা সকলেরই অজানা৷

 ১) কেদারনাথ মন্দিরে একটি ত্রিভুজাকৃতি জ্যোতির্লিঙ্গ কেদারনাথ মন্দিরে পূজা করা হয়৷
 ২) মহাভারত মহকাব্য অনুযায়ী, বেদব্যাসের নির্দেশে কেদারনাথে শিবকে তুষ্ট করার জন্য পূজা করেন পাণ্ডবেরা৷ কুরক্ষেত্র যুদ্ধে তাদের সমস্ত পাপ দূর করার জন্যই তার কেদারনাথে শিবের পূজা করতে যায়৷ শেষ অবধি তারা ভগবানকে তুষ্ট করতে সক্ষমও হয়েছিলেন৷
৩) তীব্র শীতের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি খোলা থাকে৷ শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয়মাসের জন্য উখিমঠে(রুদ্রপ্রয়াগে) নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়৷
৪) কেদারনাথ মন্দিরটি একটি মন্দির নয়৷ পরপর পাঁচটি মন্দির একসঙ্গে রয়েছে এখানে৷ কথিত আছে, শিবের আলাদা আলাদা পাঁচটি অঙ্গ এখানে পড়েছিল৷ এই পাঁচটি মন্দির হল- কেদারনাথ, রুদ্রনাথ, কল্পেশ্বর, টুঙ্গানাথ, মধ্যমাহেশ্বর৷
৫) এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরই কেদারনাথ মন্দির যাত্রার জন্য একেবারে আদর্শ৷

সব মেয়েরা কেন শিবঠাকুরের মতো স্বামী চান, জেনে নিন পাঁচটি মূল কারন

02:11:00

তারাপীঠ ওয়েবসাইট: হিন্দু ধর্মের মেয়েরা চিরকাল শিবঠাকুরের মতো স্বামী চেয়ে এসেছে। কিন্তু কেন? আসলে হিন্দু ধর্মের মেয়েরা স্বামীর মধ্যে ঠিক কোন কোন গুণগুলো চান, যেগুলো শিবঠাকুরের মধ্যে রয়েছে? এক ঝলকে দেখে নিন...

১) শান্ত প্রকৃতি কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী - শিবঠাকুর বেশিরভাগ সময়ই ধ্যানমগ্ন থাকেন। এর ফলে তিনি খুবই শান্ত প্রকৃতির। যেকোনও কঠিন পরিস্থিতিতেই তিনি শান্ত থাকতে পারেন। আবার যখনই কোনও শয়তানের আবির্ভাব হয়, শিবঠাকুর রেগে যান। এবং সেই শয়তানের বিনাশ করেন। মেয়েরাও তাঁদের স্বামীর মধ্যে এই গুণটা চান।

২) ছাপোষা কিন্তু শারীরিক কাঠামোয় সুশ্রী - শিবঠাকুরের শারীরিক কাঠামো যেকোনও মানুষকে আকৃষ্ট করবে। যাকে বলে, টল, ডার্ক এবং হ্যান্ডসাম। এবং তিনি খুবই সিম্পল। পোশাকের কোনও চাহিদা নেই। পাশাপাশি দারুণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

৩) অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো - মেয়েরা চান তাঁদের স্বামী যেন, যেকোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। যেমন শিবঠাকুর। যখনই কেউ কখনও বিপদে পড়েন, শিবঠাকুর তাঁকে সাহায্য করেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

৪) মাটিতে পা রেখে চলা - শিবঠাকুর এত শক্তির আধার হয়েও কখনও কেউকেটা মনে করেন না নিজেকে। বরং, নম্রতা, ভদ্রতা, সংযম তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ। একটু দুধ, অল্প একটু ফুলেই তিনি তুষ্ট। মেয়েরাও চান এরকম সরল সাদাসাধি স্বামী পেতে।

৫) আদ্যন্ত সংসারি - মেয়েরা চান সুন্দর করে ঘর বাঁধতে। সংসার করতে। যেমন শিবঠাকুর। তিনি তাঁর স্ত্রী পার্বতী, দুই ছেলে গণেশ এবং কার্তিক এবং দুই মেয়ে লক্ষ্ণী এবং সরস্বতীকে নিয়ে দিব্যি সংসার করেন। আবার স্বর্গ, মর্ত্য, পাতালেরও খেয়াল রাখেন।

তারাপীঠের রথযাত্রাকে ঘিরে অনেক অজানা ঘটনা

00:59:00


তারাপীঠের রথে অধিষ্ঠাত্রী থাকেন ‘মা তারা’। রবিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় মা তারাকে ওই রথে বসিয়ে ঘোরানো হয় তারাপীঠ। ঐদিন মধ্যাহ্ন ভোগের পর বিকেল তিনটের সময় রীঁ মাকে গর্ভমন্দির থেকে বের করে, রথে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাকে রাজবেশে সাজিয়ে তুলে মায়ের রথযাত্রার আরম্ভ হয়। মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বার থেকে শুরু হয়ে, দ্বারকা ব্রিজ সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড, তারাপীঠ থানা হয়ে পূর্বসাগর মোড় তারপর তিনমাথা মোড় হয়ে পুনরায় পূর্বসাগর মোড়ে এসে রথযাত্রার সমাপ্তি ঘটে।


 🎈 মাকে মূল মন্দিরে নিয়ে এসে শুরু হয় সন্ধ্যারতি। এবছরও একইভাবে এই বিশেষ দিনটিকে পালন করা হযেছে। মায়ের রথ থেকে ভক্তদের উদ্দেশে প্যাড়া, বাতাসা নকুলদানা ইত্যাদি মহাপ্রসাদ স্বরূপ বিতরণ করা হয়। হাজার হাজার পুর্ণার্থী রথের দড়িতে টান দেন। রথযাত্রা উপলক্ষে জিলিপি, পাঁপড় ভাজা, মাটির পুতুল, বেলুন ইত্যাদি বিক্রি হয়ে থাকে। তারাপীঠের স্থানীয় যারা, কাজের সূত্রে যারা বাইরে থাকেন তাঁরাও বাড়ি ফিরে আসেন মায়ের এই রথের টানে।


 ⏺️উল্টোরথের দিনেও একই ছবি দেখা যায় তারাপীঠে।





মূল ভাবনা, লেখা, তথ্য, ছবি-
      শ্রী কৌশিক মুখার্জী
(Priest, Tarapith Temple)


কেন অন্যান্য অমাবস্যার থেকে আলাদা কৌশিকী অমাবস্যা?

23:30:00

🔶 দেবী তারার অপর নাম কৌশিকী। শুম্ভ নিশুম্ভের অত্যাচার থেকে অব্যাহতি পেতে দেবতারা দেবভূমি হিমালয়ে পর্বতীর জন্য তপস্যা শুরু করেন। 
শুম্ভ নিশুম্ভকে বধ করতে দেবী নিজ দেহকোষ থেকে বের হয়ে আর এক দেবীমূর্তিতে আবির্ভাব হয়েছিলেন। যার নাম কৌশিকী।

🔷 অন্যদিকে ১২৭৪ বঙ্গাব্দে কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় সাধক বামাক্ষ্যাপা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন।
 🔹 তাই এই বিশেষ তিথিতে মায়ের পুজো দিয়ে পুন্য অর্জনের জন্য কয়েক লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটে তারাপীঠে।

💠💠 কিন্তু সময়ের অভাবে বা ব্যাস্ততার কারণে অনেক ভক্ত এসে পৌঁছাতে পারেননা মায়ের কাছে,
তাই যে সকল ভক্তবৃন্দ কৌশিকী অমাবস্যায় পুজো দিতে ইচ্ছুক ,🔘 তাঁরা নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে আপনার পূজা পাঠিয়ে দিন আগামী 19th আগস্টের মধ্যে।
⤵⤵⤵⤵⤵







- Contact Us -
Email Id
Admin@Tarapith.in
OnlinePuja@Tarapith.in
Taramaa.Temple@Gmail.com
TaraMataPuja@Gmail.com

Helpline No-
+91-8116473491, +91-7583916838
Also Available on Whatsapp


বড়বেলুনের বড়কালীমাতার মাহাত্ম্য ও মন্দিরের ইতিহাস

Greatness-of-BorokaliMata-Barabelun

বড়কালীমাতার ইতিহাসঃ-

আনুমানিক ৭০০ বছর আগে স্থাপিত হয়েছিল মা বড়মায়ের (বড়কালীমাতা) মন্দির। সাধক ভৃগুরাম স্বামী মায়ের মন্দিরের স্থাপন করেছিলের। 

বড়বেলুন গ্রামের ঐতিহাসিকতা:-

বড়বেলুন গ্রাম, যা বর্ধমান জেলার একটি প্রাচীনতম গ্রাম হিসাবে পরিচিত। এই গ্রামের আগে নাম ছিল বিল্বপত্তন, বিল্বপত্তন থেকে নাম হয়েছে বেলুন, বেলুন থেকে বড়বেলুন। এই বড়বেলুন গ্রামে যেখানে এখন মানুষ বসবাস করে সেই জায়গায় আগে মহাশ্মশান ছিল। কোনো মানুষ সেখানে বাস করতেন না।

পুরো ঠিকানা:- গ্রাম এবং পোষ্ট - বড়বেলুন, জেলা - বর্ধমান, রাজ্য- পশ্চিমবঙ্গ, দেশ- ভারতবর্ষ


-: বড়কালীমাতার আদ্যকথা :-



বড়বেলুন ভট্টাচার্য্য বংশের আদিবাস, মন্দির স্থাপয়িতা শক্তিপীঠের মহানুভব মহাসাধক স্বামী ভৃগুরাম বিদ্যাবাগীশ মহাশয় ৫১ সতীপীঠের মধ্যে কেতুগ্রামে বকুলা নদীতীরে মরাঘাটে "বহুলাপীঠ" এ তপস্যায় নিমগ্ন ছিলেন। তপস্যারত থাকা অবস্থায় তিনি স্বপ্নাদেশ পান, তিনি যেন বড়বেলুন গ্রামের মহাশ্মশানে এসে "পঞ্চমুণ্ডী" আসন স্থাপন করেন। তিনি মায়ের আদেশানুসারে এই গ্রামে এসে পঞ্চমুণ্ডী আসন স্থাপন করেন। এই স্থান উপপীঠ "শক্তিপীঠ" নামে অভিহিত। একসময় সিদ্ধিলাভের জন্য বহু বিভূতি এই স্থানে প্রদর্শন করতেন। ভৃগুরাম স্বামী নিজের হাতে মায়ে একটি ছোটো মূর্তি স্থাপন করে পূজা-অর্চনা করতেন। তিনি পঞ্চমুণ্ডি আসনে বসে যোগাসন করতেন। তার এই গ্রামে পরিচয় ছিল "বুড়ো গোঁসাই" নামে। খুব সাধারন ভাবেই কাটাতেন তিনি দিন কাল, তার প্রতিবেশী ছিল ভূত, পেত্নী, শকুন ও শৃগাল। তিনি একদিন মায়ের মূর্তি গড়ে স্নান করতে গেলেন, স্নান সেরে ফিরে আসার পর দেখে যে বেদীর ওপর মায়ের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন সেই বেদী নেই, তালপাতার ছাউনি ভেঙে গেছে। দাঁড়িয়ে আছে সেখানে বিশালাকার ভীষন বদনা মূর্তি। ভৃগুরাম ভয়ে মাতৃ স্তব করতে লাগলেন, এবং সেখান থেকে চলে যেতে চাইলেন। সেই সময় অভয় দিয়ে মা তাকে বলেন, ওরে পুত্র ভৃগুরাম এই মূর্তি থাকবে আমার "বুড়ীমাতা" নাম। তার পর থেকে ভৃগুরাম সেই ভীষনা মূর্তি পূজা করতে লাগলেন। এবার আসতে আসতে ভৃগুরাম বয়স্ক হচ্ছেন, তাহার যখন ৯৫ বৎসর বয়স তিনি মা বড়মায়ের স্বপ্নাদেশ পান -মা তাহাকে বলেন তুই মারা গেলে আমার পূজা অর্চনা কে করবে!! তাই তুই বিবাহ কর, তুই বিবাহ করলে তোর পুত্ররা বংশগত ভাবে আমার পূজা করবে। মা তাকে বলেন এই বিল্বপত্তন (বড়বেলুন) গ্রামের রাজা নারায়ন চন্দ্র রায়ের একমাত্র গুরুকন্যা অমাবস্যাতিথিতে সর্পাঘাতে মারা যাবে, তার মুখে একমুঠো চিতাভষ্ম দিয়ে জীবন দান করিয়া তাঁহাকে বিবাহ করবি। মায়ের কথা মতো অমাবস্যা দিন সর্পাঘাতের মারা যাওয়া ব্রাহ্মণ কন্যাকে শ্মশানে দাহন করার জন্য আনলে, ভৃগুরাম তাহাকে অবাক হয়ে দেখেন, দেখেন মায়ের মহিমা।। তারপর মায়ের আদেশ মতো একমুঠো চিতাভষ্ম মেয়েটি মুখে দিতেই মায়ের আশিষে মেয়েটি বেঁচে উঠলেন। তারপর ভৃগুরাম তার পরিবারে সব ঘটনা বললেন এবং ওই ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিবাহ করেন। এরপর তাহার তিন পুত্র হয়। নাম ছিল শিবচরন ন্যায়ালঙ্কার, শঙ্কর প্রসাদ বেদান্তবাগীশ ও গোবর্দ্ধন চুড়ামণি, ডাক নাম ছিল নেঙ্গুর, ভেঙ্গুর ও পীতাম্বর। ভৃগুরামের বয়স যখন ১৩৫ বৎসর তখন মায়ের স্বপ্নাদেশ পান এবার তাকে জগৎ সংসার ছাড়তে হবে, তাই মাকে তার পুত্র দের হাতে তুলে দিতে হবে। ভৃগুরাম খুশি হয়ে তার পুত্রদের ডাকলেন এবং সব কথা বললেন। তারপর কিছু দিনের মধ্যে তিনি গত হলেন। তার পুত্রদের মধ্যে শিবচরন ন্যায়ালঙ্কার (নেঙ্গুর) বিবাহ করেছিলেন তাই তার বংশ পরম্পরায় মায়ের সেবা করে আসছেন। 


-: বড়কালীমাতার পূজা :-


মা বড়কালীমাতার (মা বড়মায়ের) বিগ্রহ সারা বছর মন্দিরে স্থাপিত থাকে না। দূর্গাপূজার চারদিন পর কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন মায়ের তৈরির কাজ শুরু করা হয়, মায়ের উচ্চতা হয় প্রায় ৩০ ফুট। ভাড়া (মই) খাটিয়ে মায়ের মূর্তি নির্মাণের করা হয়। পূজার দুদিন আগে মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ (দুমেটে) সম্পূর্ণ হয়।

সংযমের দিন মায়ের মূর্তিতে খড়িমাটি লাগানো হয়। পূজার দিন দুপুর থেকে মায়ের বিশালাকার মূর্তিতে শুরু হয় রং করা হয়, সন্ধ্যায় ডাঁকের সাঁঝ লাগানো হয়, ধীরে ধীরে রাত্রি হতে থাকে, তারপর মায়ের প্রণামী আসা অসংখ্য বিশালাকার মালা, চাঁদমালা, পড়ানো হয়, ও মায়ের প্রণামি আসা বেনারসী শাড়ির কিছু সংখ্যক মায়ের হাতে তোলা হয়। এই পর্ব সম্পূর্ণ হলে আসে মায়ের গহনা । টানা ৮-৯ ঘন্টা চলে এই পুরো পর্ব, বহু মানুষ ওই স্থানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন গোটা পর্বটি। তারপর বংশের দুইজন পুরোহিত আসে এবং তারা ভাড়ার উপরে উঠে মায়ের চক্ষুদান করেন। তারপর সব কিছু হয়ে গেলে ঘর পরিষ্কার করে, ভাড়া খুলে দেওয়া হয়। শুরু হয় পূজো। এরপর সারারাত্রি ব্যাপি চলে পূজো ও বলিদান পর্ব। এইসব শেষ হতে হতে ভোর হয়ে যায়। সকালে মায়ের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। সকাল থেকেই হাজার হাজার ভক্তের ভিড় হতে শুরু হয়ে যায়। লাইন দিয়ে চলে পূজা দেবার পর্ব। সারাদিন মন্দির চত্বরে থাকে হাজার হাজার ভক্তের আনাগোনা । এই দিন মধ্যরাত্রিতে মায়ের ঘট বির্সজন করা হয়। পরের দিন সকালেও থাকে সেই একই ভিড় মায়ের মন্দির চত্বরে । লাইন দিয়ে ভক্তরা মায়ের পূজা দেন। দুপুর হতেই মায়ের গহনা খোলা হয়, ও মায়ের বির্ষজনের জন্য চারচাঁকা বিস্তৃত ইস্পাতের সাগর প্রস্তুত করা হয়। ৩:০০টে - ৩:৩০ নাগাদ মায়ের এই বিশালাকার মূর্তিটি ওই সাগরে বাঁধা হয়। বিকাল ৪:০০ টে নাগাদ মাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী বড়পুখুর ঘাটে। ওখানেই মায়ের বির্ষজন সম্পন্ন হয়। 

-: আতিথ্য দান :-

প্রতিবছর পূজার দুদিন লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়। থাকে পুলিশ নিরাপত্তা। মায়ের মন্দির রকমারি আলো দিয়ে সাজানো হয়। এই সময় গোটা গ্রাম থাকে আলোয় আলো।। প্রতিটি বাড়ি থাকে আত্মীয়পরিজনে ভর্তি। পূজোয় শুধু গ্রামের মানুষ না, বহু দেশ দেশান্তর থেকে মানুষ সমাগম হয়। মন্দির চত্বর থাকে সবসময় ভরপুর মানুষ। মন্দির চত্বরের পাশে বাচ্ছাদের বিনোদনের জন্য থাকে বিরাট মেলা, সেখানে থাকে পঞ্চাশ থেকে ষাটোর্ধে মেলা, এবং থাকে নাগড়দোল্লাও। এছাড়া থাকে রকমারি খাবারের বহু দোকান। সবমিলিয়ে বলাই যায় ভরপুর বিনোদন।


মূল তথ্য-  ঁশ্রী রাম কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য [তান্ত্রিকাচার্য্য]
পুনঃ সংস্করণ, ছবি, তথ্য -ঁশ্রী রাম কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্যের নাতি শ্রী ক্ষীরোদ প্রসাদ ভট্টাচার্য্য


তারাপীঠের দর্শনীয় স্থানাদিদর্শন

02:26:00
--
১. আটলা
বামদেবের জন্মস্থান।
দূরত্ব ৩ কিমি।

--
২. বীরচন্দ্রপুর
নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর জন্মস্থান।
ইসকন সহ আরো অনেক দর্শনীয় মন্দির। দূরত্ব ১০ কিমি।

--
৩. মল্লারপুর - মল্লেশ্বর লিঙ্গরাজ শিব। দূরত্ব ২০ কিমি।

--
৪. বিখ্যাত জয়দেবের কেন্দুলির মেলা.. দূরত্ব - ৮০ কিমি।

--
৫. কলেশ্বর - বাবা কলেশনাথ শিব। দূরত্ব
- ৩৫ কিমি।





মূল ভাবনা, লেখা, তথ্য, ছবি-
      শ্রী কৌশিক মুখার্জী
(Priest, Tarapith Temple)

৬টি জাগ্রত পীঠস্থান: যেগুলি তারাপীঠ এলে একবার যাওয়া দরকার

16:34:00


তারাপীঠের কাছে অবস্থিত ৬টি মহাপীঠস্থান।

তারাপীঠে মায়ে দর্শনের জন্য এলে, এই ৬টি স্থান একবার ঘুরে আসা দরকার। পীঠস্থান গুলি তারাপীঠের কাছাকাছি অবস্থিত, এই সমস্ত পীঠস্থানগুলি একদিনেই ঘুরে তারাপীঠ ফেরা যাবে।


১. নলহাটি - মা নলাটেশ্বরী --
তারাপীঠ থেকে প্রাইভেট অটো বা গাড়ি করে যাওয়া হয়। দূরত্ব -২৫ কিমি।



২. সাঁইথিয়া - মা নন্দেকেশ্বরী-
তারাপীঠ থেকে বেসরকারি বাস, প্রাইভেট অটো বা গাড়ি করে যাওয়া হয়। দূরত্ব -৩২ কিমি।
এছাড়া রামপুরহাট রেল স্টেশন থেকেও ট্রেনে করেও যাওয়া যায়।


৩. লাভপুর - মা ফুল্লরা -
তারাপীঠ থেকে প্রাইভেট গাড়ি করেই এখানে যাওয়া হয়। দূরত্ব -৬০ কিমি।


৪. বক্রেশ্বর - বাবা বক্রেস্বর ও উষ্ণ প্রসবন--
তারাপীঠ থেকে প্রাইভেট গাড়ি করে যাওয়া হয়। দূরত্ব -৭৫ কিমি।


৫. কঙ্কালীতলা - মা কঙ্কালী-
তারাপীঠ থেকে প্রাইভেট গাড়ি করে যাওয়া হয়। দূরত্ব -৯০ কিমি।
এছাড়াও রামপুরহাট রেল স্টেশন থেকেও ট্রেনে করে প্রান্তিক স্টেশনে নেমে ভ্যান বা টোটো করে যাওয়া যায়।

৬. আকালীপুর - গুরজয়া মা কালী-
মহারাজা নন্দকুমারের প্রতিষ্ঠিত।
দূরত্ব - তারাপীঠ থেকে ৪৪ কিমি
প্রাইভেট গাড়ি করেই এখানে যাওয়া হয়।




মূল ভাবনা, লেখা, তথ্য, ছবি - 
~শ্রী কৌশিক মুখার্জী~
(Priest, Tarapith Temple)

কেন স্তম্ভকেশ্বর শিবমন্দিরটি আশ্চর্যজনক?

16:37:00

স্তম্ভেশ্বর মন্দির


স্তম্ভকেশ্বর শিবমন্দিরের আশ্চর্যজনক কাহিনী

আরব সাগরের কোলে এ এক অপূর্ব আশ্চর্য মন্দির।প্রতিদিন সে মিলিয়ে যায় সমুদ্রের জলে। আবার ভাটার সময় জেগে ওঠে সমুদ্র থেকে। মুখে মুখে মন্দিরটির নাম হয়ে গেছে ‘ ডিজঅ্যাপিয়ারিং টেম্পল‘ বা বিলীয়মান মন্দির।

বিলীয়মান মন্দির

গুজরাটের বরোদা শহর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে কভি কম্বোই নামে একটি ছোট্ট শহরে আছে এই শিবমন্দিরটি। ১৫০ বছরের পুরোন এই মন্দিরের পোশাকি নাম স্তম্ভেশ্বর মন্দির। আরব সাগরের কোলে কাম্বে উপসাগরের মাঝে আছে এই উপাসনালয়। জোয়ারের সময় সমুদ্রের নোনা জল গ্রাস করে নেয় মন্দিরটিকে। তখন আর কিছুই দেখা যায না। কিছু ছিল বলেও মনে হয় না। আবার ভাটার সময় ধীরে ধীরে জল চলে গিয়ে সমুদ্র থেকে মহাদেবের এই মন্দিরটি জেগে ওঠে।




রোজ একবার করে প্রায় সম্পূর্ণ জলের নীচে চলে যায় মন্দির। আবার ভাটায় দেখা দিতে আসে ভক্তদের। সে দেখার মতো দৃশ্য। তিল তিল করে জল এসে ঢেকে দেয় তাকে। আবার একটু একটু করে জল সরে গিয়ে দৃশ্যমান হয়।



তখন ভক্তরা প্রবেশ করে পুজো অর্চনা করে  এমনকী ঘুরেও বেড়ানো যায় মন্দির লাগোয়া পটভূমিতে। কিন্তু জোয়ার আসার আগে খালি করে দেওয়া হয় মন্দির প্রাঙ্গণ। প্রকৃতিদেবী নিজেই শিবলিঙ্গের জল-অভিষেকের আয়োজন করেন। প্রতি অমাবস্যায় এখানে ধূমধাম করে শিবপুজো হয়। দুধের বদলে দেবতার অভিষেক হয় তেল দিয়ে। পুজোর করার পর ভক্তদের অন্যতম আকর্ষণ হল জোয়ার ভাটায় সঙ্গে মন্দিরের লুকোচুরি খেলা দেখা। জোয়ার ভাটায় মন্দিরের অদৃশ্য এবং দৃশ্যমান হওয়া দেখতে ভক্ত পর্যটকরা সারাদিনই ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকেন সমুদ্র তীরে বেশ লাগে। হর হর মহাদেব।



--------------o--------------


Writer - Goutam Biswas
  ( Copyright Protected )

দেবী সরস্বতীর নানা রূপ

12:09:00

জ্ঞান ও কলাবিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী এই দেবী সরস্বতীকে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র ষোড়শী বিদ্যাদেবী রুপে কল্পনা করে আরাধনা করেছেন এই বিদ্যা দেবীগণ সকলেই ললীত মূদ্রাসনে অধিষ্ঠিতা এবং সকলেরই দক্ষিণ হস্ত বক্ষোপরি বরমুদ্রায় স্হাপিত সরস্বতীর ষোড়শ নামে পরিচিতা। তাঁর ষোড়শগুলি হল-

১. রোহিণী- এই দেবী চর্তুভুজা এর অপর নাম "অজিতবলা"

২. প্রজ্ঞপ্তী- সরস্বতীর দ্বিতীয় নাম এই দেবীর বাহন হংস দেবী ষড়ভুজা দেবীর     হাতে আছে অসিকুঠারচন্দ্রহাস ও দর্পণ "দুহিতারী" নামেও দেবী পরিচিতা

৩. বজ্রশৃঙ্খলা-এই চর্তুভুজা দেবীর বাহন হংস দেবী হস্তে পরিখ ও বৈষ্নবাস্ত্র ধারন করেছেন

৫. চক্রেশ্বরী- দেবী সরস্বতীর এই ষোড়শভুজার বাহন হল গরুড়

৬. পুরুষদত্তা ভারতী- এই দেবী হস্তিবাহিনী এবং দেবী চর্তুভুজা দেবীর দেহ শ্রী অপূর্ব লাবন্য মন্ডিতসুদঢ় ও বলিষ্ঠ দেবীর দক্ষিণ হস্তে চক্র এবং বাম হস্তে শতঘ্নী

৭. কালী- বৃষ এই দেবীর বাহন দেবীর অপর নাম শান্তা ইনি কিন্তু দশমহাবিদ্যার কালী নন

৮. মহাকালী- এই দেবীর দক্ষিণ হস্তে যষ্টি এবং বাম হস্তে শতঘ্নী এই দেবী চতুর্ভুজা এর অপর নাম "অজিতা" ও "সুরতারকা"

৯. গৌরী- ইনি বৃষপরি অধিষ্ঠিতাচতুর্ভুজাদক্ষিন হস্তে মঙ্গল ঘট ও বাম হস্তে যষ্টি "মানসী" ও "অশোকা" দেবীর অন্য নাম

১০. গান্ধারী- চতুর্ভুজা এই দেবীর কোন বাহন নেই "চন্ডা" নামে তিনি পরিচিতা

১১. সরবাস্ত্রমহাজ্বালা- এটি দেবী সরস্বতীর একাদশ তম নাম দেবী অষ্টভুজা দক্ষিন হস্তে অসি, ত্রিশূল, ভল্ল ও বৈষ্নবাস্ত্র বাম হস্তে ব্রম্ভশীর অস্ত্রতীর ও পাশ দেবীর মস্তকে শোভা পায় মন্দিরাকৃতি সুউচ্চ মুকুট দেবীর অন্য দুই নাম হলো
" জ্বলামালিনী" ও "ভৃকুট্টী"

১২. মানবী- সর্প এই দেবীর বাহন চতুর্ভুজা এই দেবীর দুই হস্তে দর্পন, এক হস্তে যষ্টি, অপর হস্তে বরমুদ্রায় স্হাপিত "অশোকা" নামেও দেবীর আরাধনা হয় 

১৩. বৈরাট্যা- চতুর্ভুজা এই দেবীরও মানবীর ন্যায় বাহন হল সর্প্ "বৈরোটী" নামেও সম্ভবতঃ দেবীর পূজা হয়

১৪. আচ্ছুপ্তা- মহাদেবী সরস্বতীর চর্তুদশ নাম আচ্ছুপ্তা

১৫. মানসী- সিংহ এই দেবীর বাহন চতুর্ভূজা দেবীর দক্ষিন হস্তে ভল্ল ও কুঠারএবং বাম হস্তে দর্পন ও বিজয়ধনু দেবীর আর এক নাম কর্ন্দপা
.

১৬. মহামানবী- সরস্বতীর ষোড়শ নাম মহামানবী ময়ূর এই দেবীর বাহন রুপে সুপরিচিত চতুর্ভুজা দেবীর দক্ষিণ হস্তে ভল্ল এবং বাম হস্তে চক্র দেবীর অপর নাম 'নিরবাসী"


দেবী সরস্বতী অতি প্রাচীনা বৈদিক দেবী। যাস্কের নিরুক্ত বইতে সরস্বতী শব্দের দুটি মানে করা হয়েছে- একটি নদীরূপাঅন্যটি দেবীরূপা। আচার্য সায়নও বলেছেন-"দ্বিবিধা হি সরস্বতীবিগ্রহবৎ দেবতা- নদীরূপা"
ঋগ্বেদের বহুস্থানে দেবী সরস্বতী বিষয়ে অসংখ্য মন্ত্র সন্নিবিষ্ট আছে। কোথাও তিনি কলকলনাদিনী নদীরূপাআবার কোথাও বা তিনি বাকশক্তি প্রদায়িনী সাক্ষাৎ ব্রহ্মমহিষী। শঙ্করাচার্য্য সরস্বতীর নয়টি শক্তির কথা উল্লেখ করেছেন-

"
মেধা- প্রভা- বিদ্যা- ধী- ধৃতি- স্মৃতি- বুদ্ধয়ঃ।
বিদ্যেশ্বরীতি সংপ্রোক্তা ভারত্যাঃ নবশক্তয়ঃ।।"

---
মেধাপ্রভাধীবিদ্যাস্মৃতি ইত্যাদি নয়টি মূর্তিতে সরস্বতী সর্বজীবের অন্তঃস্থলে নিবাস করেন। লক্ষণীয়উপরোক্ত নয়টি নামই শ্রীশ্রীচণ্ডীর "বিষ্ণুমায়া স্তুতি"-তে খুঁজে পাওয়া যায়।
দেবী দুর্গার ন্যায় দেবী সরস্বতীরও অসংখ্য রূপভেদ লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে দেবীর অষ্টমূর্তি অধিক প্রসিদ্ধ। ব্রহ্মবিদ্যা সরস্বতীর অষ্টমূর্তি সম্বন্ধে শাস্ত্রে বলা হয়েছে-

লক্ষ্মীর্মেধা ধরা পুষ্টিঃ গৌরী তুষ্টিঃ প্রভাধৃতিঃ।
এতাভিঃ পাহি তনুভিঃ অষ্টাভির্মাং সরস্বতী।।

---
লক্ষ্মীমেধাধরাপুষ্টিগৌরীতুষ্টিপ্রভা ও ধৃতি এই অষ্টপ্রতিমায় দেবী সরস্বতী প্রকাশিতা। লক্ষণীয়এখানে লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে অভিন্নরূপে প্রতিপাদন করা হয়েছে। শ্রীশ্রীচণ্ডীতেও উপরোক্ত দৈবী বিভূতিসমূহকে মহামায়া পরাশক্তির প্রকাশভেদ বলে দেবগণ স্তব করেছেন। ঋগ্বেদের "শ্রীসুক্তে"-ও একই সত্য ধ্বনিত হয়েছে-

সিদ্ধলক্ষ্মী মোক্ষলক্ষ্মী জয়লক্ষ্মী সরস্বতী।
শ্রীলক্ষ্মী বরলক্ষীস্চ প্রসন্না ভব সর্বদা।।


এখানে সিদ্ধলক্ষীমোক্ষলক্ষ্মীবরলক্ষীজয়লক্ষী ইত্যাদি লক্ষ্মীদেবীর বিভন্ন বিভূতির মধ্যে সরস্বতী দেবীর নামও উল্লেখিত হয়েছে। যিনি ব্রহ্মশক্তিরূপে ব্রহ্মজ্ঞান বিকিরণ করেনতিনিই নারায়ণীশক্তিরূপে শাশ্বত সম্পদ অর্থাৎ ভুক্তিমুক্তি প্রদান করেন। তিনিই আবার এই সরস্বতী নামধারী আদ্যা জননীযিনি নিজ ঔজ্জ্বল্য দ্বারা পৃথিবী ও স্বর্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দীপ্তিময় করে রাখেন।

মাতা সরস্বতী স্বয়ং মেধারূপিণীধীবুদ্ধিরূপা- অর্থাৎ ধারণাশক্তি,সবকিছু বোঝবার ক্ষমতা। তত্ত্বজ্ঞান উপলব্ধি করবার প্রতিভা ও ক্ষমতা- দুইই সরস্বতীর কৃপাকটাক্ষের উপর নির্ভরশীল। ঔপনিষদিক যুগে এই মেধা দেবী সরস্বতীর অষ্টমূর্তির একজন ছিলেন বলে জানা যায়। ঋকবেদে দশটি ঋকমন্ত্রে এই মেধারূপী শুক্লবর্ণা সরস্বতীর বন্দনা করা হয়েছে। সেই মন্ত্রসমষ্টির নাম "মেধাসুক্ত"। বেদে এও বলা হয়েছে ইনি ব্রহ্মসাক্ষাৎকার করানআবার ইনিই নির্গুণ ব্রহ্মের সগুণাত্মিক সাত্ত্বিকী প্রতিমা। পদ্মপুরাণে এই দেবী মেধার অধিষ্ঠান ক্ষেত্র হিসেবে কাশ্মীর মণ্ডলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যান্য পুরাণে এনাকেই বিদ্যাশক্তি ও অবিদ্যাশক্তি উভয়মূর্তিতেই স্তব করা হয়েছে। তন্ত্রে ইনিই দশমহাবিদ্যার অন্যতম নবম মহাবিদ্যা মাতঙ্গী। নানা শাস্ত্রে এই পরাৎপরা সরস্বতীর অনন্ত মহিমা বারংবার গীত হয়েছে।

প্রজাপতি ব্রহ্মার নির্দেশে ও বিষ্ণুর অনুপ্রেরণায় দেবী সরস্বতী গান আরম্ভ করলেন। তাঁর গীত লহরীতে সৃষ্টি হল ছয় রাগ- ছত্রিশ রাগিণীর। মায়ের দিব্য সুরারোপে নিস্তব্ধ বিশ্ব হয়ে উঠল বাঙময়। দেবাদিদেব নটরাজ কৈলাস ছেড়ে নেমে এসে এই অপূর্ব সুরমূর্ছনায় মুগ্ধ হয়ে নৃত্য শুরু করলেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁর মনে হলএকটা সুর ধরবার যন্ত্র থাকলে বেশ হত।
কি করা যায়


Writer- Goutam Biswas


Copyright Protected

তারাপূজার মূল কাহিনী

23:56:00

আজ শনিবার তারামায়ের আবির্ভাব তিথি। বহুদিন ধরেই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আগে শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে মায়ের আবির্ভাব তিথি পালিত হয়ে আসছে তারাপীঠে। দুর্গা মায়ের বিদায়ে আকাশ বাতাস যখন ভারাক্রান্ত, ঠিক সেই সময় তারা মায়ের আবির্ভাব তিথিতে পুজো দিয়ে পুণ্য অর্জন করতে বৃহস্পতিবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের ভিড় জমতে শুরু করেছে এই সিদ্ধপীঠে। সাধারণত তারামায়ের মূর্তি উত্তরমুখী। ওই দিন তারামাকে পশ্চিমমুখে বসিয়ে আরাধনা করা হবে।

কথিত আছে, পাল রাজত্বের সময় শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে জয়দত্ত সদাগর স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্মশানের শ্বেতশিমুল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনের নীচে থেকে মায়ের শিলামূর্তি উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করেছিলেন। তখন থেকেই এই দিনটি মায়ের আবির্ভাব তিথি হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। তবে এতদিন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন শুক্লা চতুর্দশীতে মায়ের আবির্ভাব তিথি পালন করা হত। কিন্তু এবার যেহেতু শুক্রবার বেলা ১২টা ১২ মিনিটে শুক্লা চতুর্দশী তিথি শুরু এবং থাকছে শনিবার বেলা ১২টা ১৬ মিনিট পর্যন্ত। তাই শনিবার শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে সূর্যোদয়ের পর তারামাকে গর্ভগৃহ থেকে বের করে বিশ্রাম মন্দিরে আনা হবে। জীবিতকুণ্ড থেকে জল এনে মাকে স্নান করানোর পর রাজবেশে সাজানো হবে। ওই দিন তারামা পশ্চিম মুখে পূজিতা হন। কারণ পশ্চিম দিকে মায়ের ছোট বোন মলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দির। কিন্তু কেন এদিন মাকে পশ্চিমমুখী রাখা হয়?

এব্যাপারে মন্দিরের সেবাইত প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রাচীন কিছু পুঁথি ঘেঁটে জানা গিয়েছে, বাংলার ১১০৮ ও ইংরেজি ১৭০১ সালে আবির্ভাব তিথিতে বিশ্রাম মন্দিরে তারামাকে পূর্বদিকে বসিয়ে পুজো শুরু করার তোড়জোড় করছিলেন তদানীন্তন তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পান্ডারা। এমন সময় মলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে আরাধনায় বসেন। যা দেখে তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পান্ডারা হৈ হৈ করে ওঠেন এবং রাজাকে আসন থেকে তুলে পুজোপাঠ বন্ধ করে দেন। রাজা মায়ের প্রতি অভিমান করে চলে এসে দ্বারকা নদের পশ্চিম পাড়ে ঘট প্রতিষ্ঠা করে মায়ের পুজো করে মলুটি গ্রামে ফিরে যান। ওই রাতেই প্রধান তান্ত্রিক প্রথম আনন্দনাথকে তারা মা স্বপ্ন দিয়ে বলেন, রাখরচন্দ্র আমার ভক্ত, সে অভিমান করে চলে গিয়েছে। এবার থেকে পুজোর সময় আমার মুখ যেন পশ্চিমমুখে মলুটির কালীবাড়ির দিকে হয়। সেই থেকে বিশেষ এই তিথিতে মাকে পশ্চিমমুখী বসিয়ে পুজো করা হয়। ওই দিন সকালে মায়ের বিশেষ পুজো ও মঙ্গলারতির পর সর্বসাধারণের জন্য বিশ্রামাগার খুলে দেওয়া হবে। সকলে মাকে স্পর্শ করে পুজো দিতে পারবেন।

ঐ দিন মায়ের কোনও অন্নভোগ হয় না। তাই সেবাইতরাও উপবাসে থাকেন। সন্ধ্যায় মায়ের আরতির পর খিচুড়ি ও পাঁচরকম ভাজা দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। সেই প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভাঙেন সেবাইতরা। এরপর মাকে গর্ভগৃহে ফিরিয়ে এনে স্নান করিয়ে ফের পুজো ও আরতি করা হয় । এই আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে মন্দির চত্বর রকমারি আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে। একসময় এই তিথিতে মেলা বসত। দূর-দূরান্ত থেকে গোরুর গাড়িতে করে ভক্তরা আসত। এখনও মেলা বসে। তবে জায়গার অভাবে সেই মেলা তার আকর্ষণ হারিয়েছে।

শ্রীশ্রী রাধাষ্টমীর মূল মাহাত্ম্য

04:19:00
শ্রীশ্রীরাধারানীর প্রনাম মন্ত্র : –
তপ্ত কাঞ্চন-গোরাঙ্গীরাধে বৃন্দাবনেশ্বরী ।
বৃষ ভানু-সুতে দেবী ত্বং প্রণামামি হরি-প্রিয়ে ।।
অনুবাদঃ শ্রীমতি রাধারাণী, যাঁর অঙ্গকান্তি তপ্ত
কাঞ্চনের মতো এবং যিনি বৃন্দাবনের
ঈশ্বরী,যিনি মহারাজ বৃষভানুর দুহিতা এবং ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সী তার চরণকমলে আমি আমার
সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাই ।
রাধাষ্টমীর কথা
অনয়ারাধিতো নূনং ভগবান্ হরিরীশ্বর। যন্নোবিহায় গোবিন্দঃ প্রীতযামনয়দ্রহঃ \
অনুবাদ: এই বিশেষ গোপী নিশ্চয়ই যথার্থভাবে সর্বসক্তিমান ভগবান গোবিন্দের আরাধনা করেছিলেন, তাই তাঁর প্রতি অত্যন্ত প্রীত হয়ে তিনি অবশিষ্ট আমাদের পরিত্যাগ করে তাঁকে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়েছেন।
তাৎপর্য: শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর বর্ণনা করেছেন যে, আরাধিতঃ শব্দটি শ্রীমতী রাধারাণীর সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ভাষ্য প্রদান করেছেন, “মুনিবর শুকদেব গোস্বামী রাধারাণীর নাম গোপন রাখতে সকল প্রয়াস করেছেন। কিন্তু এখন আপনা থেকেই তাঁর মুখচন্দ্র হতে তা দীপ্তিমান হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শ্রীমতী রাধারাণীর কৃপাতেই তিনি তাঁর নাম এইভাবে প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর পরম সৌভাগ্য ঘোষনা করার জন্য আরাধিতঃ শব্দটি দুন্দুভির মতো নিনাদিত হচ্ছে।” শুকদেব গোস্বামী এত ভাবাপন্ন হয়ে রাধা নাম উচ্চারন করে ভাবছে আমি হয়তো পাঠ শেষ করতে পারবো না। আমারতো পরীক্ষিত মহারাজের সাথে সাতদিনের প্রতিজ্ঞা আছে। কিšতু যদি রাধা নাম বলতে গিয়ে এমনভাবে ভাবাপন্ন হয়ে গিয়ে যদি পাঠ বন্ধ হয়ে যায়, সেজন্য রাধা নাম বলে এত আনন্দ পাবে পরমানন্দ বিপুল হয়ে যাবে হয়তো পাঠ বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য রাধা নাম বলতে চাননি। কিন্তু তা বলে ফেলেছেন। আরাধিতঃ আরাধিতঃ রাধা নাম সেখানে গোপন করা আছে। আরাধিতঃ কার নাম আছে? কার নাম? রাধা। রাধা রাধা রাধা রাধা রাধা রাধা রাধা রাধা হরিবোল। যদিও গোপীরা যেন শ্রীমতী রাধারাণীর প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে কথা বলেছেন, কিšতু তিনিই শ্রীকৃষ্ণের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তা লক্ষ্য করে প্রকৃতপক্ষে তারা উল্লসিত হয়েছিলেন। গোপীগন চান কৃষ্ণ যেন খুশি হোক, কৃষ্ণ সন্তুষ্ট হোক। এভাবে একজন গোপী এমনভাবে কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে , তাহলে কৃষ্ণতো খুশি হলো তাই গোপীগণ উল্লসিত হলেন। শ্রীল রুপ গোস্বামী তাঁর শ্রীউজ্জ্বলনীলমণি গ্রন্থে শ্রীমতী রাধারাণীর পদচিহ্নের যে বিশদ বিবরন প্রদান করেছেন, শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর তা উদ্ধৃত করেছেন “শ্রীমতী রাধারাণীর বাম চরণের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের মূলে একটি যব চিহ্ন রয়েছে, সেই চিহ্নের নিচে এক চক্র, সেই চক্রের নিচে এক ছত্র, এবং সেই ছত্রের নিচে একটি বলয় রয়েছে। তাঁর চরণের মধ্যভাগ থেকে একটি উর্ধরেখা তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনীর সন্ধিস্থল পর্যন্ত গিয়েছে। মধ্যমা অঙ্গুলির মূলে একটি পদ্ম, তার নিচে পতাকাসহ ধ্বজ চিহ্ন এবং ধ্বজের নিচে পুষ্পবল্লী। তাঁর কনিষ্ঠাঙ্গুলির মূলে অঙ্কুশ চিহ্ন এবং গোড়ালীতে অর্ধচন্দ্রচিহ্ন। এইভাবে তাঁর বাম চরণে এগারটি চিহ্ন রয়েছে। তাঁর দক্ষিণ চরণের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠমূলে একটি শঙ্খ এবং তার নিচে একটি গদা। কনিষ্ঠা অঙ্গুলির মূলে বেদী এবং তার নীচে একটি কুণ্ডল এবং সেই কুণ্ডলের নিচে একটি গদা এছাড়া তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলির নিচে পর্বত চিহ্ন এবং পর্বতের নিচে রথ চিহ্ন রয়েছে, আর গোড়ালীতে মৎস্য চিহ্ন রয়েছে। ‘‘এইভাবে শ্রীমতী রাধারাণীর চরণ- কমলের মোট উনিশটি চিহ্ন রয়েছে।” শ্রীমতি রাধার একটি নাম হচ্ছে মাধবমোহিনী। কৃষ্ণের একটি নাম হচ্ছে মোহন। মাধব সকলকে মোহিত করেন। কিন্তু রাধারানী মাধবের মোহিনী। কৃষ্ণ ভাবছেন আমি আমার লীলা বিস্তার করবো। তার বাম পাশ থেকে রাধারানী বিস্তার হয়ে গেলেন। রাধারানী তার বিভিন্ন সেবা আয়োজন করে ভগবানকে সন্তুষ্ট করেন। রাধারানী সেবা বিস্তার করার জন্য তার বাম পাশ থেকে অনেক গোপী বিস্তার করেন। গোপীগন রাধারাণীর মতো দেখতে। এভাবে কৃষ্ণ যখন মনস্থির করলেন যে আমি দ্বাপর যুগে ব্রজধামে অবতীর্ণ হয়ে লীলা বিস্তার করবো। তিনি রাধারানীকে বললেন, “তুমিও আস।” তখন রাধারানী বললেন, “আমি কী করে ধরাধামে আসবো। তোমায় ছাড়া অন্য পুরুষ দেখতে পারবো না।” কৃষ্ণ বললেন, “ঠিক আছে, আমি ব্যবস্থা করছি। বৃষভানু মহারাজের পত্নী কীর্তিদা গর্ভবতী হলেন। অষ্টমী তিথির মধ্যাহ্নে রাধারানীর জন্ম হলো। এই তিথীতে বর্ষানার ভক্তবৃন্দ গোপ- গোপীগণ সেখানে তারা আনন্দে নাচছে যে, বৃষভানু মহারাজের কন্যা হলেন। উদ্ধব দাস এ সম্পর্কে একটি পদ লিখেছেন-
বৃষভানুপুরে আজ আনন্দ বাধাই।
রত্নভানু সুভানু নাচয়ে তিন ভাই \
দধি ঘৃত নবনীত গোরস হলদি।
আনন্দে অঙ্গনে ঢালে নাহিক অবধি \
গোপ গোপী নাচে গায় গায় যায় গড়াগড়ি।
মুখরা নাচয়ে বুড়ী হাতে লৈয়া নঢ়ি \
বৃষভানু রাজা নাচে অন্তর উল্লাসে।
আনন্দ বাধাই গীত গায় চারিপাশে \
লক্ষ লক্ষ গাভী তখন অলংকৃত করি।
ব্রাহ্মণে করয়ে দান আপনা পাসরি \
গায়ক নর্তন ভাট করে উতরোল।
দেহ দেহ লেহ শুনি এই বোল \
কন্যার বদন দেখি কীর্তিদা জননী।
আনন্দে অবশ দেহ আপনা না জানি \
কত কত পূর্ণচন্দ্র জিনিয়া উদয়।
এ দাস উদ্ধব হেরি আনন্দ হৃদয় \
এভাবে কতো আনন্দ বর্ষানায়। কিন্তু রাধারানীর পিতা – মাতার একটা হচ্ছে দুঃখ হচ্ছে যে, রাধারাণী চোখ খুলছে না। ভাবছে আমাদের কন্যা অন্ধ। চোখ খোলে না। নারদ মুনি নন্দ মহারাজের কাছে গেলেন। তার সন্তান দেখার জন্য। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে হাতে নিয়ে আশির্বাদ করেছেন। তোমার খুব ভাগ্য। এ সন্তান নারায়ণের মতো হবে। তুমি এ সন্তানকে যত্ন করো পূজা করো, সন্তানকে যত্ন করো। তোমার আর কোন পূজা করা লাগবে না। এভাবে বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে নন্দপুত্রকে আর্শিবাদ দিলেন। নারদ মুনি বুঝলেন, কৃষ্ণ আবির্ভাবের পক্ষকাল পর কে আসে? কে আসে? রাধারাণী। নারদমুনি ব্রজের আশপাশে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে খোজ করছেন, তোমার কোন কন্যা সন্তান হয়েছে? সব সন্তান নিয়ে এস আমি আশির্বাদ করবো। সন্তান নিয়ে আসলে আশির্বাদ করলো। পরপর বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে খোঁজা হলো। কিন্তু যাকে খুঁজছেন তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন কীর্তিদা বৃষভানু মহারাজের বাড়িতে গিয়েছেন। সেখানে শ্রীদামসহ বিভিন্ন সন্তান নিয়ে এলেন। কিন্তু তিনি জীজ্ঞাসা করলেন, “আরো একটা মেয়ে সন্তান হয় নি। আমি একটু দেখি দেখাও।” তখন দেখছে সুন্দর রাধারানী নিয়ে এসছে। পনের দিন বয়স। তাঁর মুখমণ্ডল কোটিচন্দ্রের ন্যায় জ্যোতির্ময়। তাকে নারদ মুনির হাতে দিয়েছে। নারদ মুনি রাধারানী, হ্লাদিনী শক্তি, আনন্দের শক্তি হাতে পেয়ে এমন আনন্দে বিভোর হয়েছেন যে, কোনো কথা বলতে পারছেন না, নড়তে পারছেন না। আর শুধু গায়ে কাঁপছে আর চোখের জল গঙ্গা হয়ে পড়ে যাচ্ছে। বৃষভানু মহারাজ ভাবছেন কী করবে। নারদ মুনি একটু স্থির হয়েছেন। তিনি বললেন, “তুমি দুঃখ করো না।” আর ঠিক যেমন কৃষ্ণের পিতা মাতার মতো বলেছেন, “তুমি এ মেয়েকে যতœ করো, পূজা করো। তোমার আর কোনো পূজা করা লাগবে না।” এভাবে নারদ মুনির ইচ্ছে ছিল রাধারানীর কিশোরী রুপ দর্শন করবেন। তাই তিনি ব্রজবনে গিয়ে ধ্যান করে প্রার্থনা শুরু করলেন রাধারাণী দেখা দাও, দেখা দাও। তখন রাধারাণী গোপীগণের সাথে কিশোরীরুপে দেখা দিয়েছেন। তখন গোপীগণ নারদমুনিকে বলেছেন, তুমি যে রাধারাণীর দর্শন পাচ্ছ তার অর্থ রাধারাণীর অসীম কৃপা হয়েছে। রাধারাণীর দর্শন পাওয়ার জন্য কতো যোগী কয়েক কল্পে তপস্যা করেছেন। একটা কল্পে হাজার যুগ, ষোল মন্বন্তর। নারদ মুনি বললেন, “ভবিষ্যতে তোমার মেয়ের দৃষ্টি আসবে। চোখ খুলবে।” একদিন বড় একটা উৎসব হলো। শিশু কৃষ্ণ এসে হামাগুড়ি দিয়ে শিশু রাধারানীর কাছে গিয়েছে। আর রাধারাণী চোখ খুলে শিশু রূপে কৃষ্ণকে দেখেছেন। তিনি অন্তরঙ্গা শক্তি। তটস্থা শক্তি আর বহিরঙ্গা শক্তি। অন্তরঙ্গা শক্তি হচ্ছে রাধারানী। আর বহিরঙ্গা শক্তি পার্বতী বা দুর্গা। আমরা জীবশক্তি আমরা মাঝখানে পরি। যখন আমরা কৃষ্ণের সেবা করবো, তখন আমরা অন্তরঙ্গা শক্তি রাধারাণীর আশ্রয়ে থাকবো। যদি আমরা মায়াকে না বলি অর্থ মায়া যদি আমাদের বলেন ভোগ করো আর আমরা যদি তাকে বলি ‘না’, আমরা কৃষ্ণের সেবা করবো, তাহলে আমরা অন্তরঙ্গা শক্তির অধীনে মধ্যে পড়ি। মায়া আমাদের যখন ভোগ বিলাস করার আয়োজন করে আর আমরা যদি বলি ‘হ্যাঁ’ ‘হ্যাঁ’ আমরা ভোগ করতে চাই, তখন আমরা মহামায়ার অধীনে থাকি এবং আমাদের কর্মফল অনুযায়ী আমাদের মায়ার অধীনের মধ্যে সুখ দুখ পেতে হবে। ভগবদগীতায় আছে মনুষ্যানাং সহস্রেষু কশ্চিৎ যততিসিদ্ধয়ে। অর্থাৎ কৃষ্ণের সমন্ধে খুব অল্প জানে পারে। কিন্তু শ্রীচৈতন্যদেবের কৃপাতে আমরা রাধা কৃষ্ণ সমন্ধে অনেক কিছু জানতে পারি। কিন্তু আমাদের খুব সাবধান থাকতে হবে। যদি আমরা মনে করি রাধাকৃষ্ণের লীলা জড়জগতের স্ত্রী পুরুষের মতো হয় তবে মহা অপরাধ। আমাদের জানতে হবে রাধারাণী হচ্ছেন কৃষ্ণ প্রেমস্বরূপিনী। তিনি কৃষ্ণের প্রেমসেবা করেন। সেটা সম্পূর্ণভাবে পারমার্থিক তত্ত¡। এইভাবে যদি আমরা রাধাকৃষ্ণকে সেবা করি তবে আমরা সেই পরম তত্ত¡ উপলব্ধি করতে পারবো। আসা করি এই রাধাষ্টমীতে রাধারাণীর যে প্রেমভক্তি তার একটা বিন্দু কমপক্ষে আস্বাদন করতে পারেন। এর থেকে আর বড় কোনো প্রার্থনা নাই।
“শ্রী গুরু চরণে রতি, এই সে উত্তম গতি, যে প্রসাদে পুরে সর্ব আশা” অর্থাৎ শ্রী গুরু উপদিষ্ট শ্রী কৃষ্ণ তত্ত, ভক্তি তত্ত, প্রেম তত্ত ও রস তত্ত আদি হৃদয়ে ধরন করিয়া শ্রী গুরু পাদ পদ্মে যাঁহারা রতি বিধান করেন, তাঁহারা শ্রী গুরু ছরনে অকপট ভক্তির বলেই প্রেমের রাজ্যে যাবতীয় প্রাপ্য বস্তুস্মূহের মধে পরমশ্রেষ্ঠ শ্রী রাধা প্রান বন্ধুর শ্রী চরন কমলের সম্বাহনাদিরূপ প্রেমসেবা অনায়েসে লাভ করিয়া ধন্য হন।
হরি ওঁম্
 
Copyright © Tarapith - The Land Of TaraMata. Designed by OddThemes | Distributed By Gooyaabi Templates