Featured post

কৌশিকী অমাবস্যার মূল রহস্য

আজ কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা কারণ তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথি টি একটু বিশেষ কারণ অনেক কঠিন ও...

Contact us

Name

Email *

Message *

Total Pageviews

Ads

Share Our Page

বড়বেলুনের বড়কালীমাতার মাহাত্ম্য ও মন্দিরের ইতিহাস

Greatness-of-BorokaliMata-Barabelun

বড়কালীমাতার ইতিহাসঃ-

আনুমানিক ৭০০ বছর আগে স্থাপিত হয়েছিল মা বড়মায়ের (বড়কালীমাতা) মন্দির। সাধক ভৃগুরাম স্বামী মায়ের মন্দিরের স্থাপন করেছিলের। 

বড়বেলুন গ্রামের ঐতিহাসিকতা:-

বড়বেলুন গ্রাম, যা বর্ধমান জেলার একটি প্রাচীনতম গ্রাম হিসাবে পরিচিত। এই গ্রামের আগে নাম ছিল বিল্বপত্তন, বিল্বপত্তন থেকে নাম হয়েছে বেলুন, বেলুন থেকে বড়বেলুন। এই বড়বেলুন গ্রামে যেখানে এখন মানুষ বসবাস করে সেই জায়গায় আগে মহাশ্মশান ছিল। কোনো মানুষ সেখানে বাস করতেন না।

পুরো ঠিকানা:- গ্রাম এবং পোষ্ট - বড়বেলুন, জেলা - বর্ধমান, রাজ্য- পশ্চিমবঙ্গ, দেশ- ভারতবর্ষ


-: বড়কালীমাতার আদ্যকথা :-



বড়বেলুন ভট্টাচার্য্য বংশের আদিবাস, মন্দির স্থাপয়িতা শক্তিপীঠের মহানুভব মহাসাধক স্বামী ভৃগুরাম বিদ্যাবাগীশ মহাশয় ৫১ সতীপীঠের মধ্যে কেতুগ্রামে বকুলা নদীতীরে মরাঘাটে "বহুলাপীঠ" এ তপস্যায় নিমগ্ন ছিলেন। তপস্যারত থাকা অবস্থায় তিনি স্বপ্নাদেশ পান, তিনি যেন বড়বেলুন গ্রামের মহাশ্মশানে এসে "পঞ্চমুণ্ডী" আসন স্থাপন করেন। তিনি মায়ের আদেশানুসারে এই গ্রামে এসে পঞ্চমুণ্ডী আসন স্থাপন করেন। এই স্থান উপপীঠ "শক্তিপীঠ" নামে অভিহিত। একসময় সিদ্ধিলাভের জন্য বহু বিভূতি এই স্থানে প্রদর্শন করতেন। ভৃগুরাম স্বামী নিজের হাতে মায়ে একটি ছোটো মূর্তি স্থাপন করে পূজা-অর্চনা করতেন। তিনি পঞ্চমুণ্ডি আসনে বসে যোগাসন করতেন। তার এই গ্রামে পরিচয় ছিল "বুড়ো গোঁসাই" নামে। খুব সাধারন ভাবেই কাটাতেন তিনি দিন কাল, তার প্রতিবেশী ছিল ভূত, পেত্নী, শকুন ও শৃগাল। তিনি একদিন মায়ের মূর্তি গড়ে স্নান করতে গেলেন, স্নান সেরে ফিরে আসার পর দেখে যে বেদীর ওপর মায়ের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন সেই বেদী নেই, তালপাতার ছাউনি ভেঙে গেছে। দাঁড়িয়ে আছে সেখানে বিশালাকার ভীষন বদনা মূর্তি। ভৃগুরাম ভয়ে মাতৃ স্তব করতে লাগলেন, এবং সেখান থেকে চলে যেতে চাইলেন। সেই সময় অভয় দিয়ে মা তাকে বলেন, ওরে পুত্র ভৃগুরাম এই মূর্তি থাকবে আমার "বুড়ীমাতা" নাম। তার পর থেকে ভৃগুরাম সেই ভীষনা মূর্তি পূজা করতে লাগলেন। এবার আসতে আসতে ভৃগুরাম বয়স্ক হচ্ছেন, তাহার যখন ৯৫ বৎসর বয়স তিনি মা বড়মায়ের স্বপ্নাদেশ পান -মা তাহাকে বলেন তুই মারা গেলে আমার পূজা অর্চনা কে করবে!! তাই তুই বিবাহ কর, তুই বিবাহ করলে তোর পুত্ররা বংশগত ভাবে আমার পূজা করবে। মা তাকে বলেন এই বিল্বপত্তন (বড়বেলুন) গ্রামের রাজা নারায়ন চন্দ্র রায়ের একমাত্র গুরুকন্যা অমাবস্যাতিথিতে সর্পাঘাতে মারা যাবে, তার মুখে একমুঠো চিতাভষ্ম দিয়ে জীবন দান করিয়া তাঁহাকে বিবাহ করবি। মায়ের কথা মতো অমাবস্যা দিন সর্পাঘাতের মারা যাওয়া ব্রাহ্মণ কন্যাকে শ্মশানে দাহন করার জন্য আনলে, ভৃগুরাম তাহাকে অবাক হয়ে দেখেন, দেখেন মায়ের মহিমা।। তারপর মায়ের আদেশ মতো একমুঠো চিতাভষ্ম মেয়েটি মুখে দিতেই মায়ের আশিষে মেয়েটি বেঁচে উঠলেন। তারপর ভৃগুরাম তার পরিবারে সব ঘটনা বললেন এবং ওই ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিবাহ করেন। এরপর তাহার তিন পুত্র হয়। নাম ছিল শিবচরন ন্যায়ালঙ্কার, শঙ্কর প্রসাদ বেদান্তবাগীশ ও গোবর্দ্ধন চুড়ামণি, ডাক নাম ছিল নেঙ্গুর, ভেঙ্গুর ও পীতাম্বর। ভৃগুরামের বয়স যখন ১৩৫ বৎসর তখন মায়ের স্বপ্নাদেশ পান এবার তাকে জগৎ সংসার ছাড়তে হবে, তাই মাকে তার পুত্র দের হাতে তুলে দিতে হবে। ভৃগুরাম খুশি হয়ে তার পুত্রদের ডাকলেন এবং সব কথা বললেন। তারপর কিছু দিনের মধ্যে তিনি গত হলেন। তার পুত্রদের মধ্যে শিবচরন ন্যায়ালঙ্কার (নেঙ্গুর) বিবাহ করেছিলেন তাই তার বংশ পরম্পরায় মায়ের সেবা করে আসছেন। 


-: বড়কালীমাতার পূজা :-


মা বড়কালীমাতার (মা বড়মায়ের) বিগ্রহ সারা বছর মন্দিরে স্থাপিত থাকে না। দূর্গাপূজার চারদিন পর কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন মায়ের তৈরির কাজ শুরু করা হয়, মায়ের উচ্চতা হয় প্রায় ৩০ ফুট। ভাড়া (মই) খাটিয়ে মায়ের মূর্তি নির্মাণের করা হয়। পূজার দুদিন আগে মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ (দুমেটে) সম্পূর্ণ হয়।

সংযমের দিন মায়ের মূর্তিতে খড়িমাটি লাগানো হয়। পূজার দিন দুপুর থেকে মায়ের বিশালাকার মূর্তিতে শুরু হয় রং করা হয়, সন্ধ্যায় ডাঁকের সাঁঝ লাগানো হয়, ধীরে ধীরে রাত্রি হতে থাকে, তারপর মায়ের প্রণামী আসা অসংখ্য বিশালাকার মালা, চাঁদমালা, পড়ানো হয়, ও মায়ের প্রণামি আসা বেনারসী শাড়ির কিছু সংখ্যক মায়ের হাতে তোলা হয়। এই পর্ব সম্পূর্ণ হলে আসে মায়ের গহনা । টানা ৮-৯ ঘন্টা চলে এই পুরো পর্ব, বহু মানুষ ওই স্থানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন গোটা পর্বটি। তারপর বংশের দুইজন পুরোহিত আসে এবং তারা ভাড়ার উপরে উঠে মায়ের চক্ষুদান করেন। তারপর সব কিছু হয়ে গেলে ঘর পরিষ্কার করে, ভাড়া খুলে দেওয়া হয়। শুরু হয় পূজো। এরপর সারারাত্রি ব্যাপি চলে পূজো ও বলিদান পর্ব। এইসব শেষ হতে হতে ভোর হয়ে যায়। সকালে মায়ের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। সকাল থেকেই হাজার হাজার ভক্তের ভিড় হতে শুরু হয়ে যায়। লাইন দিয়ে চলে পূজা দেবার পর্ব। সারাদিন মন্দির চত্বরে থাকে হাজার হাজার ভক্তের আনাগোনা । এই দিন মধ্যরাত্রিতে মায়ের ঘট বির্সজন করা হয়। পরের দিন সকালেও থাকে সেই একই ভিড় মায়ের মন্দির চত্বরে । লাইন দিয়ে ভক্তরা মায়ের পূজা দেন। দুপুর হতেই মায়ের গহনা খোলা হয়, ও মায়ের বির্ষজনের জন্য চারচাঁকা বিস্তৃত ইস্পাতের সাগর প্রস্তুত করা হয়। ৩:০০টে - ৩:৩০ নাগাদ মায়ের এই বিশালাকার মূর্তিটি ওই সাগরে বাঁধা হয়। বিকাল ৪:০০ টে নাগাদ মাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী বড়পুখুর ঘাটে। ওখানেই মায়ের বির্ষজন সম্পন্ন হয়। 

-: আতিথ্য দান :-

প্রতিবছর পূজার দুদিন লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়। থাকে পুলিশ নিরাপত্তা। মায়ের মন্দির রকমারি আলো দিয়ে সাজানো হয়। এই সময় গোটা গ্রাম থাকে আলোয় আলো।। প্রতিটি বাড়ি থাকে আত্মীয়পরিজনে ভর্তি। পূজোয় শুধু গ্রামের মানুষ না, বহু দেশ দেশান্তর থেকে মানুষ সমাগম হয়। মন্দির চত্বর থাকে সবসময় ভরপুর মানুষ। মন্দির চত্বরের পাশে বাচ্ছাদের বিনোদনের জন্য থাকে বিরাট মেলা, সেখানে থাকে পঞ্চাশ থেকে ষাটোর্ধে মেলা, এবং থাকে নাগড়দোল্লাও। এছাড়া থাকে রকমারি খাবারের বহু দোকান। সবমিলিয়ে বলাই যায় ভরপুর বিনোদন।


মূল তথ্য-  ঁশ্রী রাম কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য [তান্ত্রিকাচার্য্য]
পুনঃ সংস্করণ, ছবি, তথ্য -ঁশ্রী রাম কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্যের নাতি শ্রী ক্ষীরোদ প্রসাদ ভট্টাচার্য্য


Share this:

2 comments :

 
Copyright © Tarapith - The Land Of TaraMata. Designed by OddThemes | Distributed By Gooyaabi Templates