আজ শনিবার তারামায়ের আবির্ভাব তিথি। বহুদিন ধরেই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আগে শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে মায়ের আবির্ভাব তিথি পালিত হয়ে আসছে তারাপীঠে। দুর্গা মায়ের বিদায়ে আকাশ বাতাস যখন ভারাক্রান্ত, ঠিক সেই সময় তারা মায়ের আবির্ভাব তিথিতে পুজো দিয়ে পুণ্য অর্জন করতে বৃহস্পতিবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের ভিড় জমতে শুরু করেছে এই সিদ্ধপীঠে। সাধারণত তারামায়ের মূর্তি উত্তরমুখী। ওই দিন তারামাকে পশ্চিমমুখে বসিয়ে আরাধনা করা হবে।
কথিত আছে, পাল রাজত্বের সময় শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে জয়দত্ত সদাগর স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্মশানের শ্বেতশিমুল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনের নীচে থেকে মায়ের শিলামূর্তি উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করেছিলেন। তখন থেকেই এই দিনটি মায়ের আবির্ভাব তিথি হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। তবে এতদিন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন শুক্লা চতুর্দশীতে মায়ের আবির্ভাব তিথি পালন করা হত। কিন্তু এবার যেহেতু শুক্রবার বেলা ১২টা ১২ মিনিটে শুক্লা চতুর্দশী তিথি শুরু এবং থাকছে শনিবার বেলা ১২টা ১৬ মিনিট পর্যন্ত। তাই শনিবার শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে সূর্যোদয়ের পর তারামাকে গর্ভগৃহ থেকে বের করে বিশ্রাম মন্দিরে আনা হবে। জীবিতকুণ্ড থেকে জল এনে মাকে স্নান করানোর পর রাজবেশে সাজানো হবে। ওই দিন তারামা পশ্চিম মুখে পূজিতা হন। কারণ পশ্চিম দিকে মায়ের ছোট বোন মলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দির। কিন্তু কেন এদিন মাকে পশ্চিমমুখী রাখা হয়?
এব্যাপারে মন্দিরের সেবাইত প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রাচীন কিছু পুঁথি ঘেঁটে জানা গিয়েছে, বাংলার ১১০৮ ও ইংরেজি ১৭০১ সালে আবির্ভাব তিথিতে বিশ্রাম মন্দিরে তারামাকে পূর্বদিকে বসিয়ে পুজো শুরু করার তোড়জোড় করছিলেন তদানীন্তন তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পান্ডারা। এমন সময় মলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে আরাধনায় বসেন। যা দেখে তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পান্ডারা হৈ হৈ করে ওঠেন এবং রাজাকে আসন থেকে তুলে পুজোপাঠ বন্ধ করে দেন। রাজা মায়ের প্রতি অভিমান করে চলে এসে দ্বারকা নদের পশ্চিম পাড়ে ঘট প্রতিষ্ঠা করে মায়ের পুজো করে মলুটি গ্রামে ফিরে যান। ওই রাতেই প্রধান তান্ত্রিক প্রথম আনন্দনাথকে তারা মা স্বপ্ন দিয়ে বলেন, রাখরচন্দ্র আমার ভক্ত, সে অভিমান করে চলে গিয়েছে। এবার থেকে পুজোর সময় আমার মুখ যেন পশ্চিমমুখে মলুটির কালীবাড়ির দিকে হয়। সেই থেকে বিশেষ এই তিথিতে মাকে পশ্চিমমুখী বসিয়ে পুজো করা হয়। ওই দিন সকালে মায়ের বিশেষ পুজো ও মঙ্গলারতির পর সর্বসাধারণের জন্য বিশ্রামাগার খুলে দেওয়া হবে। সকলে মাকে স্পর্শ করে পুজো দিতে পারবেন।
ঐ দিন মায়ের কোনও অন্নভোগ হয় না। তাই সেবাইতরাও উপবাসে থাকেন। সন্ধ্যায় মায়ের আরতির পর খিচুড়ি ও পাঁচরকম ভাজা দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। সেই প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভাঙেন সেবাইতরা। এরপর মাকে গর্ভগৃহে ফিরিয়ে এনে স্নান করিয়ে ফের পুজো ও আরতি করা হয় । এই আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে মন্দির চত্বর রকমারি আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে। একসময় এই তিথিতে মেলা বসত। দূর-দূরান্ত থেকে গোরুর গাড়িতে করে ভক্তরা আসত। এখনও মেলা বসে। তবে জায়গার অভাবে সেই মেলা তার আকর্ষণ হারিয়েছে।
Post a Comment