Featured post

কৌশিকী অমাবস্যার মূল রহস্য

আজ কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা কারণ তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথি টি একটু বিশেষ কারণ অনেক কঠিন ও...

Contact us

Name

Email *

Message *

Total Pageviews

959787

Ads

Share Our Page

দূর্গোৎসবের মূল রহস্য ও ইতিহাস


তারাপীঠ :- দূর্গোৎসবের মূল রহস্য ও ইতিহাস কোনো ইতিহাসবিদ বা সমাজবিজ্ঞানী ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীতে দূর্গোৎসবের উদ্ভবের ইতিহাস ও আনুষঙ্গিক ঘটনাপঞ্জি নির্ভরযোগ্য দলিলপত্র ঘেঁটে পরিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হননি। ফলে কখন, কীভাবে দূর্গোৎসব শুরু হলো--তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে পূরাণ, মহাভারত, রামায়ন, ধর্মীয় কাব্য, নানা ঐতিহাসিক গ্রন্থ ও সূত্র থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।


পরিব্রাজক, বৌদ্ধ পন্ডিত হিউয়েন সাংকে নিয়ে দূর্গাপূজার একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। চীনা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাখায় বিভ্রান্ত হয়ে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের মূল পান্ডুলিপি সংগ্রহে ৬৩০ সালে ভারত সফরে আসেন। ভারত বর্ষের নানা বিহারে বিদ্যা অর্জন করেন। ৬৩৫-৬৪৩ পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর তিনি হর্ষবর্ধনের রাজ সভায় ছিলেন। তবে তার কাহিনী দূর্গা, কালী, কালীর আরেক রূপ চন্ডি নাকি বন দেবীকে নিয়ে-তা নিয়ে মতবেধ আছে। তবে তার রচনায় উল্লেখ করেছেন, হর্ষবর্ধন এর সময়ে দস্যু তস্কর এর উপদ্রব খুব বেশি ছিল এবং তিনি নিজেও একাধিক বার দস্যুর হাতে নিগৃহিত হয়েছিলেন। তার প্রবাস জীবনের কোন এক সময়ে গঙ্গাপথে (প্রাচীন গঙ্গারিডি) এই পরিব্রাজক কোন বৌদ্ধ বিহারে যাচ্ছিলেন। পথে দস্যুর কবলে পড়লেন। দস্যুরা তাকে দেবী দূর্গার সামনে বলি দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। কেউ মনে করেন, বন দেবী, কেউ মনে করেন কালী, কারণ প্রাচীনকালে নরমুন্ড ভোগ দেবার বিষয়টি বনদেবী বা কালী দেবীর জন্য প্রযোজ্য ছিল--যা এখন পাঠা দিয়ে পূরণ করা হয়। দূর্গা মাকে খুশী করার জন্য নরমুণ্ড ভোগ দেবার বিষয়টি ইতিহাস থেকে জানা যায় না। যাই হোক, বলির পূর্ব প্রস্ততি প্রায় শেষ, এমন সময় প্রচন্ড বেগে ঝড় ছুটে এল। সব আয়োজন ঝড়ের কবলে লন্ডবন্ড হয়ে গেল। ডাকাতরা জান বাঁচাতে পালাতে লাগল। সেই সুযোগে হিউয়েন সাংও পালিয়ে যান।


দূর্গা পূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল--তা নিয়ে নানা মতভেদ আছে। ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। আর্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবতাদের। অনার্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবীদের, তারা পূজিত হতেন আদ্যাশক্তির প্রতীক রূপে। মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের গঠন, দায়িত্ববোধ ও উর্বরতা শক্তির সমন্বয়ের কথা বিবেচনা করে অনার্য সমাজে গড়ে উঠে মাতৃপ্রধান দেবী সংস্কৃতির ধারনা। ভারতে অবশ্য মাতৃরূপে দেবী সংস্কৃতির ধারনা অতি প্রাচীন। ইতিহাস থেকে প্রমান পাওয়া যায়, প্রায় ২২,০০০ বছর পূর্ব ভারতে প্যালিওলিথিক জন গোষ্ঠি থেকেই দেবী পূজা প্রচলিত শুরু হয়েছিল। হরপ্পা ও মহেন্জোদারো সভ্যতা তথা সিন্ধু সভ্যতায় এসে তা আরো গ্রহণযোগ্য, আধুনিক ও বিস্তৃত হয়। মাতৃপ্রধান পরিবারের মা-ই প্রধান শক্তি, তার নেতৃত্বে সংসার পরিচালিত হয়, তার নেতৃত্বে শত্রু নাশ হয়, আর তাই মাকে সামনে রেখে দেবী বিশ্বাসে গড়ে উঠে, গড়ে ওঠে শাক্ত সম্প্রদায় মত। এই মত অনুসারে দেবী হলেন, শক্তির রূপ, তিনি পরব্রহ্ম। শাক্ত মতে, কালী বিশ্ব সৃষ্টির আদি কারণ। অনান্য দেব দেবী মানুষের মঙ্গলার্থে তাঁর বিভিন্ন রূপে প্রকাশ মাত্র। মহাভারত অনুসারে, দূর্গা বিবেচিত হন কালী শক্তির আরেক রূপে। নানা অমিল ও বৈচিত্র থাকা সত্বেও কিভাবে কালী দূর্গার রূপের সাথে মিশে এক হয়ে গেল সে রহস্য আজো অজানা। কেউ কেউ ধারনা করেন, সিন্ধু সভ্যতায় (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা) দেবীমাতার, ত্রিমস্তক দেবতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। দূর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী--সে হিসাবে অথবা দেবী মাতা হিসাবে পূজা হতে পারে।


ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, দূর্গা পূজার প্রথম প্রবর্তক কৃষ্ণ, দ্বিতীয় বার দূর্গা পূজা করেন স্বয়ং ব্রহ্মা আর তৃতীয়বার দূ্র্গা পূজার আয়োজন করেন মহাদেব। আবার দেবী ভাগবত পুরান অনুসারে জানতে পারি, ব্রহ্মার মানস পুত্র মনু ক্ষীরোধ সাগরের তীরে দূর্গার আরাধনা করে বর লাভে সফল হন। মূল বাল্মীকির রামায়ণে, দূর্গা পূজার কোন অস্থিত্ব নাই। কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়নে দূর্গাপূজার অস্থিত্ব আছে। কৃত্তিবাসী রামায়ণ-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এটি মূল রামায়ণের আক্ষরিক অনুবাদ নয়। মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী কবি কৃত্তিবাস ওঝা সংস্কৃত রামায়ণ বাংলা করার সময় মূল রামায়ণের বাইরের তৎলালীন সমাজে প্রচলিত বাংলার সামাজিক রীতিনীতি ও লৌকিক জীবনের নানা অনুষঙ্গ, অনেক মিথ, গল্প বাংলা রামায়ণে ইচ্ছাকৃতভাবে (নাকি গৌড়েশ্বর বা অন্য কারো অনুরোধে?) ঢুকিয়ে বাংলা রামায়ণ আরো অধিক সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, তিনি সংস্কৃত রামায়ণ উপাখ্যানের এমনভাবে বঙ্গীকরণ বা বাংগালীকরন করেন--যা পড়লে মনে হবে, রামায়নের ঘটনা তার সমাজের আদি কাহিনী।

তাঁর এই অনুবাদকৃত রামায়ণ পরিচিত পায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ নামে--যা বাংলাভাষী হিন্দু সমাজে বেশ জনপ্রিয়তা পায়, সেখানে তিনি কালিকা পুরাণের ঘটনা অনুসরণে ব্রহ্মার পরামর্শে রামের দূর্গা পূজা করার কথা উল্লেখ করেছেন। শক্তিশালী রাবনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিজয় নিশ্চিত করতে শরৎকালে শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ সাগর থেকে ১০১ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে প্রাক্ প্রস্তুতি হিসাবে দূর্গা পূজা করে দূর্গার কৃপা লাভ করেন বলে কৃত্তিবাস ওঝা বর্ণনা করেছেন। তবে দূর্গা পূজার সব চাইতে বিশদ বর্ননা পাওয়া যায় মার্কন্ডুয়ে পুরানে। যেখানে মহির্ষী জৈমিনি ও মহির্ষী মার্কন্ডুয়ের কথোপকথনের ভিত্তিতে পুরাণটি রচিত হয়। এই পুরাণের মধ্যে তেরটি অধ্যায় দেবীমহাত্ম্যম নামে পরিচিত। বাংলায় শ্রীশ্রী চন্ডি নামে সাতশত শ্লোক বিশিষ্ট দেবী মহাত্ম্যম পাঠ আছে--যা দূর্গা পূজার প্রধান ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পূজার আসরে স্থায়ী হয়ে গেছে ।


সনাতন ধর্মের আর্য ঋষিরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতীক হিসাবে দেবী দূর্গার আশীর্বাদ লাভের জন্য আরাধনা করতেন। মার্কন্ডুয়ে পুরান (Markandeya Purana ) মতে, চেদী রাজবংশের রাজা সুরাথা(Suratha) খ্রীষ্ঠের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে ওড়িষ্যা) Duseehera নামে দূর্গা পুজা প্রচলন করেছিল। নেপালে Duseehera বা Dashain নামেই পুজা হয়। যদিও প্রাচীন ওরিষ্যার সাথে নেপালের পূজার যোগসূত্র আছে কিনা সে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। পুরাণ মতে, দূর্গা পূজার ইতিহাস আছে কিন্ত ভক্তদের কাছে সেই ইতিহাস প্রামানিক নয়, বিশ্বাসের।
মধ্য যুগে বাংলা সাহিত্যে দূর্গা পূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ঢাকেশ্বরী মন্দির চত্বরে আছে দুই ধরনের স্থাপত্যরীতি মন্দির। প্রাচীনতমটি পঞ্চরত্ন দেবী দূর্গার--যা সংস্কারের ফলে মূল চেহেরা হারিয়েছে। মন্দিরের প্রাচীন গঠনশৈলী বৌদ্ধ মন্দিরের মত। দশম শতকে এখানে বৌদ্ধ মন্দির ছিল--পরবর্তীতে কিভাবে সেন আমলে হিন্দু মন্দির হয়েছিল--তা ইতিহাসে লিখা না?। ১১শ বা ১২শ শতক থেকে এখানে কালী পূজার সাথে দূর্গা পূজাও হত। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। ধারণা করা হয় যে, সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেন ১২শ শতাব্দীতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সেই সময়কার নির্মাণ শৈলীর সাথে এর স্থাপত্যকলার মিল পাওয়া যায় না বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন। তবে বিভিন্ন সময়ে এই মন্দিরের গঠন ও স্থাপনার নানা ধরনের পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। ইতিহাসবিদ দানীর মতে, প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে রমনায় কালী মন্দির নির্মিত হয়েছিল এবং এখানেও কালী পূজার সাথে দূর্গা পূজা হত।

Share this:

Post a Comment

 
Copyright © 2025 Tarapith - The Land Of TaraMata. Designed by OddThemes | Distributed By Gooyaabi Templates