Featured post

কৌশিকী অমাবস্যার মূল রহস্য

আজ কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা কারণ তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথি টি একটু বিশেষ কারণ অনেক কঠিন ও...

Contact us

Name

Email *

Message *

Total Pageviews

Ads

Share Our Page

দেবী সরস্বতীর নানা রূপ


জ্ঞান ও কলাবিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী এই দেবী সরস্বতীকে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র ষোড়শী বিদ্যাদেবী রুপে কল্পনা করে আরাধনা করেছেন এই বিদ্যা দেবীগণ সকলেই ললীত মূদ্রাসনে অধিষ্ঠিতা এবং সকলেরই দক্ষিণ হস্ত বক্ষোপরি বরমুদ্রায় স্হাপিত সরস্বতীর ষোড়শ নামে পরিচিতা। তাঁর ষোড়শগুলি হল-

১. রোহিণী- এই দেবী চর্তুভুজা এর অপর নাম "অজিতবলা"

২. প্রজ্ঞপ্তী- সরস্বতীর দ্বিতীয় নাম এই দেবীর বাহন হংস দেবী ষড়ভুজা দেবীর     হাতে আছে অসিকুঠারচন্দ্রহাস ও দর্পণ "দুহিতারী" নামেও দেবী পরিচিতা

৩. বজ্রশৃঙ্খলা-এই চর্তুভুজা দেবীর বাহন হংস দেবী হস্তে পরিখ ও বৈষ্নবাস্ত্র ধারন করেছেন

৫. চক্রেশ্বরী- দেবী সরস্বতীর এই ষোড়শভুজার বাহন হল গরুড়

৬. পুরুষদত্তা ভারতী- এই দেবী হস্তিবাহিনী এবং দেবী চর্তুভুজা দেবীর দেহ শ্রী অপূর্ব লাবন্য মন্ডিতসুদঢ় ও বলিষ্ঠ দেবীর দক্ষিণ হস্তে চক্র এবং বাম হস্তে শতঘ্নী

৭. কালী- বৃষ এই দেবীর বাহন দেবীর অপর নাম শান্তা ইনি কিন্তু দশমহাবিদ্যার কালী নন

৮. মহাকালী- এই দেবীর দক্ষিণ হস্তে যষ্টি এবং বাম হস্তে শতঘ্নী এই দেবী চতুর্ভুজা এর অপর নাম "অজিতা" ও "সুরতারকা"

৯. গৌরী- ইনি বৃষপরি অধিষ্ঠিতাচতুর্ভুজাদক্ষিন হস্তে মঙ্গল ঘট ও বাম হস্তে যষ্টি "মানসী" ও "অশোকা" দেবীর অন্য নাম

১০. গান্ধারী- চতুর্ভুজা এই দেবীর কোন বাহন নেই "চন্ডা" নামে তিনি পরিচিতা

১১. সরবাস্ত্রমহাজ্বালা- এটি দেবী সরস্বতীর একাদশ তম নাম দেবী অষ্টভুজা দক্ষিন হস্তে অসি, ত্রিশূল, ভল্ল ও বৈষ্নবাস্ত্র বাম হস্তে ব্রম্ভশীর অস্ত্রতীর ও পাশ দেবীর মস্তকে শোভা পায় মন্দিরাকৃতি সুউচ্চ মুকুট দেবীর অন্য দুই নাম হলো
" জ্বলামালিনী" ও "ভৃকুট্টী"

১২. মানবী- সর্প এই দেবীর বাহন চতুর্ভুজা এই দেবীর দুই হস্তে দর্পন, এক হস্তে যষ্টি, অপর হস্তে বরমুদ্রায় স্হাপিত "অশোকা" নামেও দেবীর আরাধনা হয় 

১৩. বৈরাট্যা- চতুর্ভুজা এই দেবীরও মানবীর ন্যায় বাহন হল সর্প্ "বৈরোটী" নামেও সম্ভবতঃ দেবীর পূজা হয়

১৪. আচ্ছুপ্তা- মহাদেবী সরস্বতীর চর্তুদশ নাম আচ্ছুপ্তা

১৫. মানসী- সিংহ এই দেবীর বাহন চতুর্ভূজা দেবীর দক্ষিন হস্তে ভল্ল ও কুঠারএবং বাম হস্তে দর্পন ও বিজয়ধনু দেবীর আর এক নাম কর্ন্দপা
.

১৬. মহামানবী- সরস্বতীর ষোড়শ নাম মহামানবী ময়ূর এই দেবীর বাহন রুপে সুপরিচিত চতুর্ভুজা দেবীর দক্ষিণ হস্তে ভল্ল এবং বাম হস্তে চক্র দেবীর অপর নাম 'নিরবাসী"


দেবী সরস্বতী অতি প্রাচীনা বৈদিক দেবী। যাস্কের নিরুক্ত বইতে সরস্বতী শব্দের দুটি মানে করা হয়েছে- একটি নদীরূপাঅন্যটি দেবীরূপা। আচার্য সায়নও বলেছেন-"দ্বিবিধা হি সরস্বতীবিগ্রহবৎ দেবতা- নদীরূপা"
ঋগ্বেদের বহুস্থানে দেবী সরস্বতী বিষয়ে অসংখ্য মন্ত্র সন্নিবিষ্ট আছে। কোথাও তিনি কলকলনাদিনী নদীরূপাআবার কোথাও বা তিনি বাকশক্তি প্রদায়িনী সাক্ষাৎ ব্রহ্মমহিষী। শঙ্করাচার্য্য সরস্বতীর নয়টি শক্তির কথা উল্লেখ করেছেন-

"
মেধা- প্রভা- বিদ্যা- ধী- ধৃতি- স্মৃতি- বুদ্ধয়ঃ।
বিদ্যেশ্বরীতি সংপ্রোক্তা ভারত্যাঃ নবশক্তয়ঃ।।"

---
মেধাপ্রভাধীবিদ্যাস্মৃতি ইত্যাদি নয়টি মূর্তিতে সরস্বতী সর্বজীবের অন্তঃস্থলে নিবাস করেন। লক্ষণীয়উপরোক্ত নয়টি নামই শ্রীশ্রীচণ্ডীর "বিষ্ণুমায়া স্তুতি"-তে খুঁজে পাওয়া যায়।
দেবী দুর্গার ন্যায় দেবী সরস্বতীরও অসংখ্য রূপভেদ লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে দেবীর অষ্টমূর্তি অধিক প্রসিদ্ধ। ব্রহ্মবিদ্যা সরস্বতীর অষ্টমূর্তি সম্বন্ধে শাস্ত্রে বলা হয়েছে-

লক্ষ্মীর্মেধা ধরা পুষ্টিঃ গৌরী তুষ্টিঃ প্রভাধৃতিঃ।
এতাভিঃ পাহি তনুভিঃ অষ্টাভির্মাং সরস্বতী।।

---
লক্ষ্মীমেধাধরাপুষ্টিগৌরীতুষ্টিপ্রভা ও ধৃতি এই অষ্টপ্রতিমায় দেবী সরস্বতী প্রকাশিতা। লক্ষণীয়এখানে লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে অভিন্নরূপে প্রতিপাদন করা হয়েছে। শ্রীশ্রীচণ্ডীতেও উপরোক্ত দৈবী বিভূতিসমূহকে মহামায়া পরাশক্তির প্রকাশভেদ বলে দেবগণ স্তব করেছেন। ঋগ্বেদের "শ্রীসুক্তে"-ও একই সত্য ধ্বনিত হয়েছে-

সিদ্ধলক্ষ্মী মোক্ষলক্ষ্মী জয়লক্ষ্মী সরস্বতী।
শ্রীলক্ষ্মী বরলক্ষীস্চ প্রসন্না ভব সর্বদা।।


এখানে সিদ্ধলক্ষীমোক্ষলক্ষ্মীবরলক্ষীজয়লক্ষী ইত্যাদি লক্ষ্মীদেবীর বিভন্ন বিভূতির মধ্যে সরস্বতী দেবীর নামও উল্লেখিত হয়েছে। যিনি ব্রহ্মশক্তিরূপে ব্রহ্মজ্ঞান বিকিরণ করেনতিনিই নারায়ণীশক্তিরূপে শাশ্বত সম্পদ অর্থাৎ ভুক্তিমুক্তি প্রদান করেন। তিনিই আবার এই সরস্বতী নামধারী আদ্যা জননীযিনি নিজ ঔজ্জ্বল্য দ্বারা পৃথিবী ও স্বর্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দীপ্তিময় করে রাখেন।

মাতা সরস্বতী স্বয়ং মেধারূপিণীধীবুদ্ধিরূপা- অর্থাৎ ধারণাশক্তি,সবকিছু বোঝবার ক্ষমতা। তত্ত্বজ্ঞান উপলব্ধি করবার প্রতিভা ও ক্ষমতা- দুইই সরস্বতীর কৃপাকটাক্ষের উপর নির্ভরশীল। ঔপনিষদিক যুগে এই মেধা দেবী সরস্বতীর অষ্টমূর্তির একজন ছিলেন বলে জানা যায়। ঋকবেদে দশটি ঋকমন্ত্রে এই মেধারূপী শুক্লবর্ণা সরস্বতীর বন্দনা করা হয়েছে। সেই মন্ত্রসমষ্টির নাম "মেধাসুক্ত"। বেদে এও বলা হয়েছে ইনি ব্রহ্মসাক্ষাৎকার করানআবার ইনিই নির্গুণ ব্রহ্মের সগুণাত্মিক সাত্ত্বিকী প্রতিমা। পদ্মপুরাণে এই দেবী মেধার অধিষ্ঠান ক্ষেত্র হিসেবে কাশ্মীর মণ্ডলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যান্য পুরাণে এনাকেই বিদ্যাশক্তি ও অবিদ্যাশক্তি উভয়মূর্তিতেই স্তব করা হয়েছে। তন্ত্রে ইনিই দশমহাবিদ্যার অন্যতম নবম মহাবিদ্যা মাতঙ্গী। নানা শাস্ত্রে এই পরাৎপরা সরস্বতীর অনন্ত মহিমা বারংবার গীত হয়েছে।

প্রজাপতি ব্রহ্মার নির্দেশে ও বিষ্ণুর অনুপ্রেরণায় দেবী সরস্বতী গান আরম্ভ করলেন। তাঁর গীত লহরীতে সৃষ্টি হল ছয় রাগ- ছত্রিশ রাগিণীর। মায়ের দিব্য সুরারোপে নিস্তব্ধ বিশ্ব হয়ে উঠল বাঙময়। দেবাদিদেব নটরাজ কৈলাস ছেড়ে নেমে এসে এই অপূর্ব সুরমূর্ছনায় মুগ্ধ হয়ে নৃত্য শুরু করলেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁর মনে হলএকটা সুর ধরবার যন্ত্র থাকলে বেশ হত।
কি করা যায়


Writer- Goutam Biswas


Copyright Protected

Share this:

Post a Comment

 
Copyright © Tarapith - The Land Of TaraMata. Designed by OddThemes | Distributed By Gooyaabi Templates